ছবি- সংগৃহীত

পেপ গার্দিওলা, স্প্যানিশ এই কোচ যেখানেই পা রেখেছেন সাফল্য তার হাতে ধরা দিয়েছে। বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখের পর ম্যানচেস্টার সিটির হয়েও একক আধিপত্য দেখিয়ে যাচ্ছেন এই মাষ্টারমাইন্ড।

শনিবার (১০ জুন) রাতে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে রদ্রির একমাত্র গোলে ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টার মিলানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছে ম্যানসিটি।

এবারের মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিল ম্যানসিটি। এবার ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরার খেতাব অর্জনের সাথে ‘ট্রেবল’ জয়ের স্বাদ পেল সিটিজেনরা।

এমন ঐতিহাসিক অর্জনের দিনে অনন্য রেকর্ড গড়েছেন সিটি বস পেপ গার্দিওলাও। ইতিহাসের প্রথম কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জেতা প্রথম ম্যানেজার হিসেবে নিজের নাম খোদাই করলেন এই কিংবদন্তি।

২০০৮-০৯ মৌসুমে বার্সেলোনার কোচ হয়ে প্রথমবার ‘ট্রেবল’ জিতেছিলেন গার্দিওলা। সেবার লা লিগা, কোপা দেল রের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। এরপর কাতালান ক্লাবটির হয়ে ২০১০-১১ মৌসুমে ইউরোপসেরার কৃতিত্ব দেখান তিনি।

এবার ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে কোচ হিসেবে তৃতীয়বার ইউরোপসেরার মঞ্চে ট্রফি স্পর্শ করলেন গার্দিওলা। একইসঙ্গে ষষ্ঠ কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ইউরোপিয়ান কাপ জয়ের নজির গড়লেন তিনি।

শুধু তাই নয়, জিনেদিন জিদান এবং বব পাইসলির সঙ্গে যৌথভাবে তিনটি ইউরোপিয়ান কাপ শিরোপা জিতলেন গার্দিওলা। সর্বাধিক চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে তাদের উপরে আছেন শুধুই রিয়াল মাদ্রিদ বস কার্লো আনচেলত্তি।

এর আগে একমাত্র ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনই ট্রেবল জিতেছিলেন। এবার এই তালিকায়ও নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখালেন ৫২ বছর বয়সী গার্দিওলা।

ফাইনালের পর গার্দিওলা বলেন, ‘ইতিহাসের দিক থেকে এই প্রতিযোগিতায় ইন্টার মিলান আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। আমরা খেলায় ফেভারিট ছিলাম। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ইস্তাম্বুলে স্থানীয় সময় রাত ১০টায় আমরা সম্ভাব্য সেরা পারফরম্যান্স করি এবং এটাই পার্থক্য তৈরি করে দেয়।’

মাঠের ফুটবলারদের সঙ্গে কোচও যে সমান তালে তারকাখ্যাতি পেতে পারেন, তা দেখিয়েছেন পেপ গার্দিওলা। অবশ্য তার সাফল্যই তাকে দিয়েছে অমরত্ব। কঠোর পরিশ্রম আর তীক্ষ্ণ ফুটবল মস্তিক তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

পেশাদার ফুটবল ছাড়ার পর লা লিগার মর্যাদাপূর্ণ ক্লাব বার্সেলোনার ‘বি’ দলের হয়ে কোচিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন গার্দিওলা। তবে এক বছরের মাথায়ই মূল দলের দায়িত্ব নিয়ে চার মৌসুমে দলকে উপহার দিয়েছেন ১৩টি ট্রফি।

কাতালান ক্লাবটির হয়ে ক্যারিয়ারে তিনটি লিগ টাইটেল, দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছেন গার্দিওলা। এরপর জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে ৫ বছরে তিনটি লিগ শিরোপা, একটি উয়েফা সুপার কাপ এবং একটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি।

২০১৭ সালে পাড়ি জামান বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ লিগ ইপিএলে। প্রথম দুই আসরেই লিগ শিরোপা উপহার দেন ক্লাবকে। তবে ২০২০ সালে শিরোপা হাতছাড়া হয়ে হ্যাটট্রিক লিগ জয় থেকে বঞ্চিত হন পেপ গার্দিওলা। সেই ক্ষুধাই হয়তো তাতিয়ে দিয়েছিল কোচ গার্দিওলাকে।

এরপর গত তিন মৌসুমের শিরোপা জিতে অনন্য রেকর্ড গড়েন এই স্প্যানিশ কোচ। হ্যাটট্রিক শিরোপা ঘরে তুলে ম্যানচেস্টার সিটি, যা সিটিতে গার্দিওলার ৬ মৌসুমে ৫ লিগ শিরোপা। একইসঙ্গে একটি এফএ কাপ, চারটি ইএফএল কাপ এবং ২টি কমিউনিটি শিল্ড জয় করেন।

তবে একটা জায়গায় অপূর্ণতা রয়ে গিয়েছিল গার্দিওলার, যেটার জন্য ক্ষুধার্ত বাঘ হয়ে ছিলেন তিনি। সেই অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাও ম্যানসিটিকে জিতিয়ে দিলেন তিনি, আর নিজে অমরত্ব লাভ করলেন এই মাস্টারমাইন্ড কোচ।