|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

গ্রাম-গঞ্জে কেউ বড় বড় ছক্কা মারতে পারলে তাকেই প্রায় সবাই ক্রিস গেইল কিংবা আন্দ্রে রাসেল বলেই চিনতেন। এখনকার সময়ে কেউ বেশি সময় উইকেটে টিকে থাকতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই মুমিনুল হকের নামই চলে আসবে। দেশের বাইরের কারও কথা বললে নিশ্চিতভাবেই জো রুট, স্টিভ স্মিথ আর মার্নাস ল্যাবুশেনের কথা বলতে হয়। তবে আপনি কিছুটা পেছন ফিরে তাকালে রাহুল দ্রাবিড়কে খুঁজে পাবেন।

নিখুঁত ব্যাটিংয়ের কৌশল, ব্যাটিং টেম্পারমেন্ট আর উইকেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকার কারণে দ্রাবিড়কে বিশেষায়িত করা হয় ‘দ্য ওয়াল’ হিসেবে। যারা টেস্ট ক্রিকেটটাকে মনে প্রাণে ভালোবাসেন তারা নিজেকে দ্রাবিড় হিসেবে পরিচয় দিতেই ভালোবাসতেন। অনেকের ক্ষেত্রে অবশ্য ভিন্নতাও আছে। উদাহরণের জন্য শাহাদাত হোসেন দিপুর নামটা বলা যেতে পারে। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের ইস্পাহানি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

একেবারে তরুণ হলেও তার ব্যাটিংয়ে ছিল টেস্ট ক্রিকেটের ছায়া। তার নিখুঁত ব্যাটিংয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল একাডেমির পুরোটা জুড়ে। যে কারণে অনেকে দিপুকে 'রাহুল দ্রাবিড়' বলে ডাকতেন। তরুণ কাউকে দ্রাবিড় বলে ডাকলে খুশি হবারই কথা। যদিও এমন কিছুতে খুশি হতে পারেননি দিপু। বরং নিজেকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেছেন তিনি। সেটার পেছনে অবশ্য অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে ডানহাতি এই ব্যাটারকে।

বয়স যখন মাত্র ৯, তখন বাবা আবদুস সবুরকে হারিয়েছেন দিপু। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাড়িচালক হিসেবে কাজ করা সবুর পরালোগমন করেছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। বাবার মৃত্যুতে অভাব নেমে আসে দিপুদের সংসারে। অভাব-অনটনের মাঝেও অবশ্য ক্রিকেটটা চালিয়ে যান তিনি। সেখানে তাকে সর্বোচ্চ সহায়তা করেছেন তার বড় ভাই।

এই প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের আলাপকালে দিপু বলেন, ‘আমার বাবা যখন মারা গেছে তখন আমি ছোট ছিলাম। ওইরকমভাবে বুঝতে পারি নাই বিষয়টা। আস্তে আস্তে যখন বড় হচ্ছিলাম, আমার বড় ভাই আমাকে সাহায্য করছিল।’ এদিকে এলাকায় ভালো খেলার সুবাদে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ট্রায়াল দিয়েছিলেন দিপু। যেখানে দুই থেকে একমাস ক্যাম্পও করেছিলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত সুযোগটা পাওয়া হয়নি তার।

বিকেএসপিতে সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন চট্টগ্রামের এই ক্রিকেটার। সেখান থেকে তাকে বের করে এনে দিয়েছিলেন সুদীপ্ত দেব নামের চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগের এক ক্রিকেটার। তার হাত ধরে ইম্পাহানি ক্রিকেট একাডেমিতে পথচলা শুরু হয় দিপুর। এরপরও এগিয়ে যাওয়াটা সহজ ছিল তার জন্য। অনূর্ধ্ব -১৬ বিজয় দিবস টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়ে চট্টগ্রাম অনূর্ধ্ব -১৪ বিভাগীয় দলে ডাক পান তিনি। যদিও মেডিকেল করতে না পারায় বাদ পড়তে হয়। যদিও পরের বছর অনূর্ধ্ব-১৪ দলে খেলেছেন দিপু।

এরপর অনেকটা পথ পেরিয়ে ২০২০ অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপে জায়গা করে নেন, জিতেছেন যুব বিশ্বকাপও। তার ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে সুদীপ্ত কতটা প্রভাব রেখেছিলেন সেটার কথাই শুনিয়েছেন দিপু। তিনি বলেন, ‘সুদীপ্ত ভাই ছিল, সে ক্রিকেটে অনেক হেল্প করছিল। জিনিসপত্র থেকে শুরু করে সবকিছু দিয়ে আরকি। ওইভাবেই আসলে ওইখান থেকে আস্তে ধীরে আগানো।’

বিশ্বকাপ জয়ের পর বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট, বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়েও নিয়মিত পারফর্ম করেছেন। সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরেছেন। নিখুঁত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ধৈর্য্যের পরীক্ষায়ও পাশ করেছেন দিপু। এখন পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২০ ম্যাচে ৩৬.১৪ গড়ে করেছেন ১ হাজার ২৬৫। যেখানে ১০ হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছেন দুটি সেঞ্চুরিও। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে সমান তিনটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করা দিপুর রান ১ হাজার ১৫০। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা ৭৩ রানের ইনিংস মনে ধরেছিল হাবিবুল বাশার সুমনের।

সিরিজ শেষ হওয়ার পর সেই বাশারের কাছ থেকেই পেয়েছেন জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবর। দিপু বলেন, ‘ওইরকমভাবে কিছু বলে নাই। সিলেক্ট হওয়ার পরে বাশার স্যার কল দিছিলো।’ বাংলাদেশের টেস্ট দলে সুযোগ পেয়ে বেশ খুশি তিনি। দিপু বলেন, ‘ খুশি তো লাগবে এটা স্বাভাবিক। সবারই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। আমারও সেম। ডে বাই ডে আরও যাতে ইম্প্রুভ করতে পারি, সেটাই চিন্তা করতেছি।’

জাতীয় দলে কিভাবে লম্বা সময় টিকে থাকা যায় সেই ভাবনাও ভেবে রেখেছেন দিপু। স্কিল নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি মানসিকভাবে নিজেকে আরও শক্তিশালী করতে চান ডানহাতি এই ব্যাটার। আপাতত এটাতেই মনোযোগ তার। দিপু মনে করেন, যত উন্নতি হবে তার খেলায় তত বেশি সহজ হবে।

দিপু বলেন, ‘আমি ডে বাই ডে নিজের স্কিলটাকে ডেভেলপ করার চেষ্টা করব। মানসিকভাবে আরও স্ট্রং হওয়ার চেষ্টা করব। এটাই আমার কাজ। যতই, ইম্প্রুভ করব, আমার জন্য খেলাটা ইজি হবে।’ সবকিছু ঠিক থাকলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে অভিষেকও হতে পারে দিপুর। তবে আফগান টেস্ট নিয়ে এখনও তেমন কোনো পরিকল্পনা করেননি তিনি। ডানহাতি এই ব্যাটার বলেন, ‘ওই রকম কিছু চিন্তা করি নাই।’