দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের রাজধানী মাপুতোর একটি কারাগারে ভয়াবহ দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩৩ জন নিহত এবং ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এসময় কারাগারের দেওয়াল ভেঙে পালিয়ে যায় ১৫০০ জনেরও বেশি বন্দি। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং বিবিসি পৃথক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বুধবার রাতে কারাগারের ভেতরে বন্দিদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। রক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটে এবং সেই সুযোগে বন্দিরা কারাগারের একটি দেওয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়।

মোজাম্বিকের পুলিশ প্রধান বার্নার্ডিনো রাফায়েল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘটনাস্থলে ৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। বন্দিদের পলায়নের পর ১৫০ জনকে পুনরায় আটক করা হয়েছে।

গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোজাম্বিকে রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিরোধী দল নির্বাচনকে কারচুপি হিসেবে উল্লেখ করে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে। সোমবার দেশটির সাংবিধানিক আদালত ক্ষমতাসীন ফ্রেলিমো দলের প্রার্থী ড্যানিয়েল চ্যাপোকে নির্বাচিত ঘোষণা করার পর বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়।

বিক্ষোভকারীদের একটি দল বুধবার কারাগারের কাছে অবস্থান নেয়। এই পরিস্থিতিতে বন্দিরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেওয়াল ভেঙে পালিয়ে যায় বলে জানায় পুলিশ।

কারাগার দাঙ্গার সময় এক ফায়ার সার্ভিস কর্মী ট্রাকচাপায় নিহত হন। এছাড়া অগ্নিনির্বাপণে কাজ করা ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

বিবিসির তথ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে ফ্রেলিমো দলের ক্ষমতায় থাকা এবং বিরোধী দলের অভিযোগের কারণে মোজাম্বিকে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত তিন মাসে এই অস্থিরতায় প্রায় ১৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের ধরতে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। তবে বিরোধী দলের দাবি, কারাগারের পরিস্থিতি এবং দাঙ্গার ঘটনা সরকারের অব্যবস্থাপনারই প্রমাণ।

মোজাম্বিকের এই দাঙ্গা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো পরিস্থিতি মনিটর করছে এবং কারাগারে বন্দিদের নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

মোজাম্বিকের কারাগারে সংঘটিত এই ভয়াবহ দাঙ্গা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং রাজনৈতিক উত্তেজনারই প্রতিফলন। নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।