বাংলাদেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ২৫ ডিসেম্বর রাতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এই আগুনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের নথি পুড়ে গেছে, যা প্রশাসনের কার্যক্রমে বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আগুনের ধরন দেখে এটিকে 'পরিকল্পিত নাশকতা' বলে সন্দেহ করছেন এবং তাদের মতে, এটি 'রিমোট কন্ট্রোল' ব্যবহার করে লাগানো হতে পারে।

আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, সচিবালয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের ব্যর্থতার কারণে তৃতীয় কোনো পক্ষ আগুন লাগাতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে, আগুনের বিস্তার এতটা ভয়াবহ ছিল যে, এটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে লাগানো হতে পারে। সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ জানান, পরিকল্পিতভাবে শর্টসার্কিট ঘটিয়ে আগুন সৃষ্টি করা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শর্টসার্কিটের জন্য কোনো বৈদ্যুতিক তারের সংযোগের স্থানে আগে থেকেই বারুদ বা কেমিক্যাল রেখে স্পার্ক দিয়ে আগুন লাগানো হতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে আগুনের উৎস ও কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু নিশ্চিত করা হয়নি। তবে, সরকারী উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন যে, পর্যাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যের অভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, তথ্যের প্রবাহ ঠিকভাবে নিশ্চিত হওয়া জরুরি এবং তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এদিকে, আগুনের ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার যথেষ্ট ঘাটতির অভিযোগও উঠেছে। ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান বলেছেন, সচিবালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগাতে সক্ষম হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এত সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী থাকা সত্ত্বেও কেন এই ঘটনার অগ্নিকাণ্ড থামানো সম্ভব হয়নি।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে, একসঙ্গে একাধিক স্থানে আগুন লাগার ঘটনা দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত। এই ধরনের নাশকতামূলক আগুনের ঘটনা সারা দেশে নজিরবিহীন এবং এটি প্রশাসনিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। সাবেক ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা একেএম শাকিল নেওয়াজ দাবি করেছেন, সচিবালয়ে আগুন লাগতে ১০ ঘণ্টা সময় লাগা একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা এবং এটি 'নাশকতা'র লক্ষণ হতে পারে।

এই ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা দ্রুত ঘটনার সঠিক কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা তদন্ত কমিটিতে ফায়ার সার্ভিসের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কেমিক্যাল, এক্সপ্লোসিভ, এবং ইলেকট্রিক্যাল এক্সপার্টদের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন, যেন আগুনের উৎস এবং পরিকল্পিত নাশকতার বিষয়টি পরিষ্কার করা যায়।

সচিবালয়ে আগুন লাগানোর ঘটনাটি অনেকের জন্য একটি বড় সতর্কবাণী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচিবালয়কে দেশের ‘কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাই এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ধরনের আপস গ্রহণযোগ্য নয়। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা পুনরায় না ঘটে, সে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা বাংলাদেশের প্রশাসনিক নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেছে। তদন্ত চলমান থাকলেও, সরকারের কাছে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এটি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং এর পেছনে কোনো পরিকল্পিত উদ্দেশ্য থাকতে পারে, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।