ঢাকা, বুধবার, ১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধে বিশ্বরেকর্ড

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৪ ডিসেম্বর ৩০ ১৫:৪৬:৫৭
বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধে বিশ্বরেকর্ড

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাংলাদেশ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে প্রায় ১৭১ দশমিক ১ কোটি মার্কিন ডলার, যা বিদেশি ঋণের নতুন আগমনের চেয়ে অনেক বেশি। এই সময়ের মধ্যে বিদেশি দাতা সংস্থা এবং দেশগুলো বাংলাদেশকে মোট ১৫৪ দশমিক ৩ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) রোববার তাদের মাসিক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঋণ প্রতিশ্রুতি কমেছে ৯১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ এবং ঋণ বিতরণও ২৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কমেছে। তবে, ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ১৭১ দশমিক ১ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে, যখন বিদেশি ঋণ প্রতিশ্রুতি এসেছে ১৫৪ দশমিক ৩ কোটি ডলার।

এই সময়ে উন্নয়ন অংশীদাররা মোট ৫২ দশমিক ২৬ কোটি ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৫৮ দশমিক ৬ কোটি ডলার। এ সময়ে ঋণ বিতরণও কমেছে, ২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার মূলধন এবং সুদ পরিশোধ করেছে, যা গত বছর ছিল ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার কারণে উন্নয়ন অংশীদাররা অর্থ ছাড় করতে আগ্রহী নয়। এমনকি এই বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। উচ্চ সুদের কারণে বিদেশি ঋণ পরিশোধে বাড়তি চাপ পড়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঋণ প্রতিশ্রুতি এবং অর্থছাড় কমে আসার পেছনে জুলাই-অগাস্ট মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতারও প্রভাব রয়েছে। ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, এই সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটায় ঋণ বিতরণ কমে গেছে এবং বিদেশি পরামর্শক ও কর্মীরা অনুপস্থিত থাকায় অনেক প্রকল্প স্থগিত হয়ে গেছে। সরকার বর্তমানে ঋণ প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে এবং সাময়িকভাবে কিছু ঋণ চুক্তি স্থগিত রেখেছে।

এছাড়া, সরকার ঋণ প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করছে এবং বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সহ অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদাররা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন করতে আগ্রহী।

অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশি ঋণ থেকে নেয়া প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বন্ধ করছে। ইআরডি সংস্থাগুলোকে বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দের জন্য অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে এডিবি, ৩১৮ মিলিয়ন ডলার। এরপর রয়েছে জাপান, ৩০৮ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া, রাশিয়া ২৪৫ মিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাংক ২০৫ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত ৬৩ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার ঋণ বিতরণ করেছে।

অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান ড. জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছর একটি ব্যতিক্রমী সময়। প্রথম দুই-তিন মাস অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থমকে ছিল এবং ঋণ আসে মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। তবে বাস্তবায়ন ধীরগতিতে চলায় ঋণ বিতরণ কমে গেছে, এবং জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের প্রভাবও এর ওপর পড়েছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে