ঢাকা, রবিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১

টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে মুখ খললেন ড. ইউনূস

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জানুয়ারি ১২ ১৮:০৬:২৭
টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে মুখ খললেন ড. ইউনূস

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্রিটেনের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সম্পত্তি নিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায় টিউলিপের ব্যবহৃত সম্পত্তি এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা উচিত।

লন্ডনের সম্পত্তি নিয়ে অভিযোগ

সম্প্রতি সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে, পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম থাকা একটি অফশোর কোম্পানি কিনেছিল এমন একটি বাড়িতে টিউলিপ দীর্ঘদিন বাস করেছেন। এই কোম্পানির সাথে দুই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ড. ইউনূস মন্তব্য করেন, “এটি কোনো চুরি নয়, এটি সরাসরি ডাকাতি।”

দুর্নীতির অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া

ড. ইউনূস মনে করেন, টিউলিপের মতো দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা জনগণের কাছে একপ্রকার নির্মম রসিকতা হয়ে দাঁড়ায়। তার মতে, যদি এসব অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়, তবে টিউলিপের উচিত হবে ক্ষমা চাওয়া এবং পদত্যাগ করা। তবে তিনি স্বীকার করেন, টিউলিপের পদত্যাগ করা উচিত কি না তা নির্ধারণ করা তার কাজ নয়।

টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মারের কাছে তদন্তের আবেদন করেছেন। স্টার্মার বলেছেন, এথিকস উপদেষ্টার তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করবেন। তবে ডাউনিং স্ট্রিট ইতোমধ্যেই টিউলিপের বিকল্প খুঁজছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

পরিবারের সম্পত্তি ও বিতর্ক

প্রকাশিত তথ্যমতে, টিউলিপের পরিবার লন্ডনে আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেনা পাঁচটি সম্পত্তি ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে গোল্ডার্স গ্রিন এলাকায় ১.২ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি সম্পত্তি শেখ রেহানা ব্যবহার করতেন। এই সম্পত্তিটি একটি অফশোর ট্রাস্টের মাধ্যমে কেনা হয়, যার সাথে শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে সায়ান রহমান যুক্ত ছিলেন।

গণঅভ্যুত্থানের পর সালমান এফ রহমানের পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৮০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে সিআইডি। সায়ান রহমানের দুবাই, সিঙ্গাপুর ও লন্ডনে সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে।

দুর্নীতির বিস্তৃতি

ড. ইউনূস অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। তিনি বলেন, “এই টাকা দিয়ে বিদেশে প্রাসাদোপম বাড়ি কেনা হয়েছে।” তিনি দাবি করেন, এসব অর্থ সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকা এবং তা পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট টিউলিপের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি, ব্রিটেনের এনসিএ সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ পেলে টিউলিপের সম্পত্তি ও তহবিল ফ্রিজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে প্রমাণগুলো খুবই নিরেট এবং কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে তা বাতিল করা যাবে না।” তিনি আরও জানান, যুক্তরাজ্যে একটি ফ্ল্যাট নিয়ে তদন্ত হলে তা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

উপসংহার

টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পত্তি ও তার পরিবারের সম্পৃক্ততা নিয়ে যে কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে ব্রিটেন ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্তের দাবি করেছেন ড. ইউনূস। এর ফলে টিউলিপের ওপর পদত্যাগের চাপ আরও বেড়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থা তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে, যা পরিস্থিতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে