২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটসহ সকল তামাকজাত পণ্যের খুচরা মূল্য অন্তত ১০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়। তাদের মতে, সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ফলে একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে ধূমপানের হারও কমবে। আজ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।

উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অব প্রোগ্রামস শাহীন উল আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার কায়সার হামিদ ও শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মানবিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাজমুল ইসলাম।

উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আবদুল্লাহ নাদভী জানান, ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে সিগারেটের দামে ৬ থেকে ২২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলেও একই সময়ে ৩২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর ফলে সিগারেট তুলনামূলকভাবে আরও সহজলভ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। তাই আসন্ন বাজেটে সিগারেটের খুচরা মূল্য কমপক্ষে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি কর আহরণ সহজ করতে সিগারেটের স্তর সংখ্যা কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত পাঁচ অর্থবছরে কার্যকর কর আরোপ করা হলে সিগারেট বিক্রির মাধ্যমে সরকার ১১ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি রাজস্ব আয় করতে পারত।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, তামাকজনিত রোগের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। তাই সিগারেটের সহজলভ্যতা কমাতে এবং তামাকজনিত ক্ষতি কমানোর জন্য শক্তিশালী নীতিমালা প্রণয়ন এবং তার কার্যকর বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

উন্নয়ন সমন্বয়ের পক্ষ থেকে সিগারেট বিক্রি থেকে রাজস্ব ২০ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে বাজেটে কর সংক্রান্ত সুস্পষ্ট পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বক্তারা বলেন, সিগারেটের ওপর কার্যকর কর আরোপের মাধ্যমে সরকার উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় করতে পারবে। এই আয় দেশের স্বাস্থ্যখাতসহ অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা সম্ভব। পাশাপাশি, সিগারেটের দাম বৃদ্ধি করলে তা জনসাধারণের জন্য কম সহজলভ্য হবে, যা ধূমপানের হার কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা সিগারেটের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি তামাকজাত পণ্যের ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তাদের মতে, এটি শুধু রাজস্ব বৃদ্ধিতে নয়, বরং জনস্বাস্থ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং রাজস্ব বৃদ্ধির এই প্রস্তাব আগামী বাজেটে সরকার কীভাবে বাস্তবায়ন করবে, তা নিয়ে এখন অপেক্ষা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল ও সচেতন জনগণ।