ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত, ভারতীয় নারীদের আগাম সন্তান জন্মদানের হিড়িক

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জানুয়ারি ২৩ ২২:২১:১০
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত, ভারতীয় নারীদের আগাম সন্তান জন্মদানের হিড়িক

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিলের আদেশ জারি করেছেন। এই সিদ্ধান্ত আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। ফলে মার্কিন মাটিতে জন্ম নেওয়া শিশুরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাবে না। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভারতীয় দম্পতিদের ওপর।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ কার্যকর হওয়ার আগে সন্তানের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে অনেক ভারতীয় মা নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান জন্ম দিতে সি-সেকশনের জন্য হাসপাতালে ভিড় করছেন।

আগাম সন্তান জন্মদানে হাসপাতালগুলোতে চাপ

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন মার্কিন হাসপাতালে সি-সেকশন করানোর জন্য অস্বাভাবিক সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে। বিশেষত নিউ জার্সির ডা. এস. ডি. রামার ম্যাটারনিটি ক্লিনিকে ৮ বা ৯ মাসের গর্ভবতী নারীদের আগাম সিজারের জন্য ব্যাপক আবেদন জমা পড়েছে। এমনকি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও অকাল প্রসবের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন।

ডা. রামা জানান, ‘‘একজন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তার স্বামী অকাল প্রসবের জন্য আবেদন করেছেন। তবে গর্ভাবস্থার পূর্ণ মেয়াদ না হলে মা ও শিশুর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।’’

অকাল প্রসবের ঝুঁকি নিয়ে সতর্কতা

টেক্সাসের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এস. জি. মুক্কালা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানান, অকাল জন্ম মা ও শিশুর জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এতে শিশুর ফুসফুসের সমস্যা, কম ওজন, স্নায়বিক জটিলতা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনি গত দু’দিনে প্রায় ২০টি দম্পতির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাদের এই ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

নতুন নিয়মে নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কা

নতুন নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, যদি কোনো অবৈধ অভিবাসীর সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়, তবে সেই শিশু আর মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। এমনকি বৈধ ভিসায় থাকা অভিবাসীরাও যদি সেখানে সন্তান জন্ম দেন এবং তাদের মধ্যে কেউ স্থায়ী বাসিন্দা না হন, তবে তাদের সন্তানেরা নাগরিকত্ব হারাবে।

এইচ-ওয়ানবি ও এল-ওয়ান ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা হাজার হাজার ভারতীয়ের মধ্যে অনেকেই গ্রিন কার্ডের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের মধ্যে অনেকের সন্তান নাগরিকত্ব পাবে না বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসরত এক দম্পতি জানিয়েছেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের খবরে তারা ভেঙে পড়েছেন। আট বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা এই দম্পতি বলেন, ‘‘আমরা আইনজীবীর পরামর্শে সন্তানের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে।’’

আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে ট্রাম্পের আদেশ

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি অঙ্গরাজ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা এই আদেশকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল আদালতে আবেদন করেছেন।

এক বিবৃতিতে রব বন্টা বলেন, ‘‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের এই আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সঙ্গে খাপ খায় না। প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। আমরা আদালতের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’’

পরিস্থিতির ভয়াবহতা

এই নির্বাহী আদেশ কার্যকরের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ভারতীয় দম্পতিরা চরম আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। সন্তানসম্ভবা প্রিয়া নামে এক ভারতীয় নারী বলেন, ‘‘আমরা ছয় বছর ধরে গ্রিন কার্ডের জন্য অপেক্ষা করছি। এই পরিস্থিতিতে সন্তানের নাগরিকত্ব পাওয়ার আশা ছিল আমাদের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার একমাত্র উপায়। এখন আমরা পুরোপুরি বিপদে পড়ে গেছি।’’

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের এই আদেশ শুধু ভারতীয় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের জন্য অনিশ্চয়তা ও চাপ তৈরি করেছে। আদেশ কার্যকর হওয়ার আগে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে