বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সরকার একাধিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন পদ সৃষ্টি, শিক্ষার মানোন্নয়ন, এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও কার্যকর ও আধুনিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ

প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত করতে সরকার ৫,১৬৬টি নতুন পদের অনুমোদন দিয়েছে। এর আওতায় সংগীত এবং শারীরিক শিক্ষার জন্য ক্লাস্টারভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে, যা পরবর্তীতে সারাদেশে সম্প্রসারিত হবে।

চারুকলার শিক্ষক নিয়োগ

শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারুকলার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এই খাতে ৫,০০০টিরও বেশি পদ সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে। এটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।

সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন ও প্রমোশনের লক্ষ্যে ৯,৫৭২টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে শিক্ষকদের ক্যারিয়ার উন্নয়ন সহজতর হবে।

শিক্ষক নিয়োগ ও বদলি সহজীকরণ

আগামী তিন মাসের মধ্যে ২০৮ জন প্রধান শিক্ষক এবং ৬,৫৩১ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া সহজ করতে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা বদলির দীর্ঘসূত্রিতা দূর করবে।

মিড-ডে মিল প্রকল্প

শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে মিড-ডে মিল কার্যক্রম আরও সমৃদ্ধ করা হয়েছে। এতে ডিম, দুধ, পাউরুটি, কলা এবং মৌসুমি ফল অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রাথমিকভাবে ১৫০টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি চালু করা হবে।

প্রি-প্রাইমারি শিক্ষার মেয়াদ বৃদ্ধি

শিশুদের মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রি-প্রাইমারি শিক্ষার মেয়াদ এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

স্কুল ভবনের আধুনিকায়ন

রাজধানী ঢাকার ২০৪টি স্কুল পুনর্গঠন এবং ১০টি আধুনিক স্কুল উদ্বোধনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব স্কুলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংযোজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।

বিশেষ প্রকল্প: কক্সবাজার ও বান্দরবান

কক্সবাজার এবং বান্দরবানের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৯৫০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে এসব অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অবকাঠামো শক্তিশালী করা হবে।

নতুন কার্যক্রম বাস্তবায়নে কনসালটেশন কমিটি

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কনসালটেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পিইডিপি-৫ প্রকল্পের কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

সরকারের এই উদ্যোগগুলো প্রাথমিক শিক্ষা খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় দৃষ্টিনন্দন স্কুল ভবন এবং আধুনিক কার্যক্রমের বাস্তবায়নে দেশের শিক্ষা খাত নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।