আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিওফ অ্যালারডাইস পদত্যাগ করেছেন। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ২০১২ সালে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অপারেশনস ম্যানেজারের দায়িত্ব ছেড়ে আইসিসির মহাব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেন অ্যালারডাইস। পরে ২০২১ সালের নভেম্বরে তাকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে, মানু শনেকে বরখাস্ত করার পর আট মাস ভারপ্রাপ্ত সিইওর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

পদত্যাগের কারণ ও অ্যালারডাইসের প্রতিক্রিয়া

হঠাৎ পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কথা বলেছেন অ্যালারডাইস। আইসিসির প্রকাশিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, "আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতে পারা আমার জন্য সম্মানের। ক্রিকেটকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে আইসিসির সদস্যদের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তি স্থাপন পর্যন্ত আমরা যা কিছু অর্জন করেছি, তাতে আমি সত্যিই গর্বিত।"

আইসিসির প্রতিক্রিয়া

অ্যালারডাইসের বিদায়ে তার নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ। তিনি বলেন, "প্রধান নির্বাহী হিসেবে জিওফ অ্যালারডাইসের নেতৃত্ব ও নিবেদনের জন্য আইসিসি বোর্ডের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে তার প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তার কাজের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ এবং ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই।"

গুঞ্জন ও সম্ভাব্য কারণ

আইসিসির পক্ষ থেকে অ্যালারডাইসের পদত্যাগের কারণ খোলাসা করা হয়নি। তবে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে ২০২৫ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচি ও ভেন্যু চূড়ান্ত করতে বিলম্ব এবং ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের বিশৃঙ্খলা তার পদত্যাগের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচি নির্ধারণে দেরি হওয়ায় ভারতীয় দলের পাকিস্তানে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেননি অ্যালারডাইস। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এ নিয়ে আইসিসিকে একাধিকবার চিঠি পাঠায়। এছাড়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মূল সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান স্টার স্পোর্টসও সূচি প্রকাশে বিলম্ব নিয়ে আইসিসির কাছে আপত্তি জানায় এবং তাদের চুক্তির বাধ্যবাধকতার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়।

বিশ্বকাপে বাজে অর্থ ব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত ব্যয়

২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজনে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আইসিসির পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্য এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বাজে অর্থ ব্যবস্থাপনার জেরে গত জুলাই মাসে সংস্থাটির বিপণন ও যোগাযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ক্লেয়ার ফারলং এবং ভেন্যু পরিদর্শক দলের সদস্য ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটির প্রধান ক্রিস টেটলিও পদত্যাগ করেন। এবার সেই একই পথে হাঁটলেন জিওফ অ্যালারডাইস।

নতুন সিইওর খোঁজে আইসিসি

অ্যালারডাইসের বিদায়ের পর আইসিসি এখন নতুন প্রধান নির্বাহী খুঁজতে ব্যস্ত। সামনের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সফল আয়োজনের জন্য অভিজ্ঞ ও দক্ষ একজনকে সিইও হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে সংস্থাটি। ক্রিকেট বিশ্ব এখন অপেক্ষায়, কে হতে যাচ্ছেন আইসিসির নতুন প্রধান নির্বাহী।