বিপিএলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা যেন উল্টো নতুন নতুন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছে খেলোয়াড়দের বকেয়া পারিশ্রমিকের ইস্যু। বিশেষ করে দুর্বার রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির আর্থিক সামর্থ্য নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

এই সমস্যার জন্য শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজিকেই নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেও (বিসিবি) দায়ী করেছেন তামিম ইকবাল। বোর্ডের উচিত ছিল যথাযথ যাচাই-বাছাই করে ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়োগ দেওয়া, এমনটাই মনে করেন তিনি। ভবিষ্যতে দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে নিজেও ভূমিকা রাখতে চান বলে জানিয়েছেন দেশসেরা এই ওপেনার।

বিসিবির দূরদর্শিতার অভাব

বিপিএলে ফরচুন বরিশালের ম্যাচ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পুরোনো পারিশ্রমিক বকেয়া থাকার প্রসঙ্গে তামিম বলেন, 'আমি দেখেছি ২০১২ সালের বিষয়টি বারবার আনা হচ্ছে। তবে এটি ২০১৩ সালের ঘটনা। তখনকার বোর্ড সদস্যরা আমাকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিয়েছিলেন, যদিও পুরো পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। তবে সমস্যার একটা সমাধান হয়েছিল।'

এ বছর নতুন কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি অন্তর্ভুক্ত করার ফলে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিসিবির ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তামিম বলেন, 'আমি চাই বিপিএল আরও উন্নতি করুক, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি পাক। একসময় আমরা অনেক দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলাম। তবে যখন ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন খুবই সতর্ক হওয়া উচিত—কাদের হাতে দল দেওয়া হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'দিন শেষে যদি একটি দল খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে না পারে, তবে সেটার দায় ফ্র্যাঞ্চাইজি ও বিসিবির। অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক বকেয়া ছিল, পরে দর কষাকষির মাধ্যমে ২৫ শতাংশ দিয়ে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু দোষ খেলোয়াড়দের নয়, কারণ তারা মাঠে পারফর্ম করে।'

ক্রিকেটারদের ভোগান্তি ও তামিমের পরামর্শ

এবারও রাজশাহীর ক্রিকেটাররা চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। নিজেদের খরচ বহন করেই টুর্নামেন্ট খেলতে হচ্ছে তাদের। ১২টি ম্যাচ খেলে ফেললেও এখনো বকেয়া রয়েছে পারিশ্রমিক। বিসিবি অবশ্য ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সময় বেঁধে দিয়েছে সমস্যার সমাধানের জন্য। এ প্রসঙ্গে তামিম বলেন, 'আশা করি দ্রুতই সমাধান করা হবে। এমন ঘটনা শুধু বিপিএলের ক্ষতি করে না, দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তিও নষ্ট করে। এতে বিদেশি ক্রিকেটাররা আসতে নিরুৎসাহিত হয়। ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্বাচনে আরও সতর্ক হওয়া জরুরি।'

তামিম খেলোয়াড়দের স্বার্থ রক্ষায় নতুন নিয়ম প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমানে ড্রাফটের বাইরে যেসব খেলোয়াড় ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে চুক্তি করেন, সেগুলো শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট দল ও খেলোয়াড়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, ফলে বিসিবির কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকে না। তামিমের প্রস্তাব, 'ড্রাফটের বাইরে কোনো খেলোয়াড় চুক্তি করলে তার লিখিত কপি তিন পক্ষের কাছে থাকবে—একটি খেলোয়াড়ের, একটি বিসিবির ও একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির। এতে অন্তত বোর্ড জানতে পারবে কে কত পারিশ্রমিক পাচ্ছে, আর এই সমস্যার সমাধান সহজ হবে।'

ভবিষ্যতে উদ্যোগী হতে চান তামিম

বিপিএলের বাইরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিভিন্ন উন্নয়নে ভূমিকা রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তামিম। তাকে প্রশ্ন করা হয়, ভবিষ্যতে কি তিনি নিজেই এসব সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হতে চান? জবাবে তামিম বলেন, 'আমি বিসিবিকে প্রফেশনাল হতে বলিনি, বলেছি ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে। ইনশাআল্লাহ্‌, আমার মনে হয় বিপিএল তো কেবল একটা অংশ, কিন্তু আরও অনেক জায়গায় উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।'

তামিমের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি কোনো ব্যবস্থা নেয় কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে তার স্পষ্ট বার্তা—বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে সঠিক পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।