অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তার পদত্যাগ সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি সাম্প্রতিক সময়ের গুঞ্জন নিয়ে কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, "আমি সংবাদটি দেখেছি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে নানা আলোচনা লক্ষ্য করেছি। তবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তথ্যের উৎস সম্পর্কে সুস্পষ্ট কিছু উল্লেখ করা হয়নি।"

তিনি আরও বলেন, "এখনও পর্যন্ত আমার বা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা যদি সরকার ছাড়ার পরিকল্পনা করি, তবে তা নিজেরাই জানাবো। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করবো। কিন্তু আপাতত আমরা সরকারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।"

এর আগে, দৈনিক 'আমার দেশ' এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল যে, জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, নাহিদ ইসলাম ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন, এবং আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জুন মাসে একই পথে হাঁটতে পারেন।

সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, নতুন ছাত্র নেতৃত্বাধীন দলটি প্রথমে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবে, যেখানে নাহিদ ইসলামকে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিতে দেখা যেতে পারে। ইতোমধ্যে দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজও চলছে।

এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, "যদি অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেয়, তবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।"

এই বিষয়ে নাহিদ ইসলাম আগে থেকেই বলেছিলেন, যদি তিনি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, তবে তিনি সরকারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন।

অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটির এক বৈঠকে বেশ কয়েকজন সদস্য মত দিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা জনসমর্থন উপভোগ করেন, তাদের সরকার থেকে বেরিয়ে এসে নতুন রাজনৈতিক দলকে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, "জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। জনগণ আশা করে যে, আন্দোলনের নেতারা সরকার থেকে বেরিয়ে এসে নতুন রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন।"

তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ, কৃষক, শ্রমিক এবং ছাত্রসমাজ অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে। যারা স্বৈরশাসক হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে, তারাই এবার রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তর থেকে তার সহযোগীদের উৎখাত করবে এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করবে।"

এদিকে, জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন, বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের নতুন রাজনৈতিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বর্তমানে ১৭ সদস্যের একটি কমিটি ২৪ দফার একটি ইশতেহার চূড়ান্ত করার কাজ করছে, যা দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই প্রকাশ করা হতে পারে।