ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

বিদায়ের ঘোষাণা দিলেন ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার

ফুটবল ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ ফেব্রুয়ারি ০৬ ২০:১৭:১৫
বিদায়ের ঘোষাণা দিলেন ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার

দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা মার্সেলো ভিয়েরা। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক আবেগঘন ভিডিও বার্তায় ৩৬ বছর বয়সী এই ফুটবলার আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেন। বিশ্ব ফুটবলে একজন সেরা লেফট ব্যাক হিসেবে পরিচিত এই ব্রাজিলিয়ান তারকা তার ফুটবলীয় দক্ষতা, অসাধারণ ড্রিবলিং, এবং সৃজনশীল খেলোয়াড়ী শৈলীর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

২০০৭ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্স থেকে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন মার্সেলো। সেই সময় ক্লাবটিতে রবার্তো কার্লোসের মতো মহাতারকা ছিলেন, যার উত্তরসূরি হিসেবে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন তরুণ মার্সেলো। বাঁ প্রান্তে দুর্দান্ত গতির সঙ্গে নিখুঁত পাসিং আর আক্রমণাত্মক ফুটবলের কারণে দ্রুতই দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হন তিনি।

রিয়ালের হয়ে সাড়ে পনেরো বছরের ক্যারিয়ারে ৫টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৬টি লা লিগা, ২টি কোপা দেল রে, ৫টি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপসহ মোট ২৫টি শিরোপা জয় করেন তিনি। তার বিদায়ের সময় পর্যন্ত তিনিই ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়। পরবর্তীতে নাচো, লুকা মদ্রিচ এবং দানি কার্ভাহাল তাকে অতিক্রম করেন।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়া ছিল তার। দুজন মিলে রিয়ালের বাঁ প্রান্ত থেকে অসংখ্য আক্রমণ তৈরি করেছেন এবং গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। ফুটবলবিশ্বে মার্সেলোর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে রিয়ালের অন্যতম সেরা লেফট ব্যাক হিসেবে।

ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় মার্সেলো বলেন,"আজ আমি এমন এক অধ্যায়ের সমাপ্তি টানছি, যা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ ছিল। তবে ফুটবলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখানেই শেষ নয়। এই খেলার প্রতি ভালোবাসা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি আরও অনেক কিছু দিতে চাই।"

২০২২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পর রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে দেন মার্সেলো। এরপর গ্রিসের ক্লাব অলিম্পিয়াকোসে স্বল্প সময়ের জন্য খেলেন। তবে ইউরোপ ছেড়ে দ্রুতই ব্রাজিলে ফিরে যান এবং শৈশবের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সে যোগ দেন। সেখানে ২০২৩ সালে ক্লাবটিকে কোপা লিবের্তাদোরেস জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে এক বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। গ্রেমিওর বিপক্ষে ম্যাচের সময় ফ্লুমিনেন্সের কোচ মানো মেনেজেসের সঙ্গে মাঠেই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় তার। এরপর ক্লাব ছাড়তে বাধ্য হন, এবং সেই থেকে আর কোনো দলে যোগ দেননি।

জাতীয় দলের হয়ে ৫৮ ম্যাচ খেলে ৬ গোল করেছেন মার্সেলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বড় কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে পারেননি। ২০১৩ সালে কনফেডারেশনস কাপ জেতা ব্রাজিল দলের সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়া দুটি অলিম্পিকে ব্রাজিলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন—২০০৮ সালে ব্রোঞ্জ এবং ২০১২ সালে রুপা জয় করেন তিনি। তবে ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ব্রাজিলের ৭-১ গোলে লজ্জাজনক পরাজয়ের দিনও তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।

মার্সেলো শুধুমাত্র একজন ডিফেন্ডার ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন আধুনিক ফুটবলার, যিনি আক্রমণেও সমান দক্ষ ছিলেন। তার খেলা ছিল চোখধাঁধানো, স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের উজ্জীবিত করার মতো। ড্রিবলিং, নিখুঁত ক্রস, এবং আক্রমণে ধারাবাহিকতার কারণে ফুটবলবিশ্বে লেফট ব্যাকদের জন্য এক নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছেন তিনি।

খেলোয়াড় হিসেবে বিদায় নিলেও ফুটবলের সঙ্গে তার সম্পর্ক এখানেই শেষ নয়। কোচিং, পন্ডিত বা ফুটবল প্রশাসনে যুক্ত হয়ে ভবিষ্যতে নতুন ভূমিকায় দেখা যেতে পারে তাকে। ফুটবলপ্রেমীরা কখনোই ভুলবে না সেই মার্সেলোকে, যিনি রিয়ালের বাঁ প্রান্ত থেকে অগণিত স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন।

একটি সফল ক্যারিয়ারের পর অবসরে গেলেও, মার্সেলোর প্রভাব ফুটবলে থেকে যাবে বহু বছর ধরে। তার খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হবে আগামী প্রজন্মের ফুটবলাররা। কিংবদন্তির নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরদিন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ