ঢাকা, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

যেভাবে দোয়া করলে শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল হয়

ধর্ম ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৪ ১৪:১৬:২০
যেভাবে দোয়া করলে শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল হয়

দোয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহ তায়ালার কাছে বান্দার চাওয়ার, চিত্তের আকুতি এবং প্রয়োজনের একমাত্র মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের দোয়া কবুল করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। দোয়া করা যায় যে কোনো মুহূর্তে এবং কোনো নির্দিষ্ট সময় না দেখে, তবে কিছু বিশেষ সময়ের গুরুত্ব এবং দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে, যেগুলোর মধ্যে শবে বরাতের রাতও অন্যতম।

দোয়ার বিশেষ সময়ের মধ্যে রয়েছে—আজান ও ইকামতের মাঝের সময়, ফরজ নামাজের পর, গভীর রাতে তাহাজ্জুদের সময়, শেষ রাতে যখন আল্লাহ তায়ালা নিজেই বান্দার দোয়া শোনার জন্য প্রস্তুত থাকেন। বিশেষত, এই সময়ে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের অভাব, ঋণ পরিশোধ, জীবনের শান্তি এবং গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা মেনে নিয়ে তাঁদের জীবনে রহমত এবং বরকত প্রদান করেন।

এছাড়াও, শবে বরাতের রাতটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। শবে বরাতে, আল্লাহ তায়ালা মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। এ রাতের রাতে, বান্দা যদি তাঁর অন্তর থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে মোনাজাত করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর দোয়া কবুল করেন এবং তাকে সব ধরনের পাপ থেকে মুক্তি দেন।

ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, "এই রাতের ফজিলত এবং দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তা ইমাম শাফেয়ী মুসতাহাব মনে করতেন, যা অর্থাৎ তা আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি শ্রদ্ধা ও গ্রহণযোগ্য।" ইমাম শাফেয়ী রহ. তাঁর মসনদের সময়ের ভেতরে এই রাতের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন এবং বিশেষভাবে এই রাতে আল্লাহ তায়ালার রহমতের কাছে পৌঁছানোর সুযোগের কথা উল্লেখ করেছেন। (ইবনে রাজাবের ‘লাতায়েফুল মাআরিফ’, পৃষ্ঠা ১৩৭)

এ রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়া প্রদর্শন করেন, এবং তারা যারা তাঁর কাছে ক্ষমা চায়, তাদের ক্ষমা করেন। এই রাতে বিশেষ করে যাদের পাপ রয়েছে, তারা যদি আন্তরিকভাবে দোয়া করেন, তাহলে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন।

ইমাম শাফেয়ী রহ. এর জীবনী

ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর পুরো নাম মোহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস ইবনে আব্বাস ইবনে উসমান ইবনে শাফেয়ী। তিনি ১৫০ হিজরী, যা ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে, ফিলিস্তিনের গাজা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ইবনে শাফেয়ী ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, এবং মা তাঁকে খুবই যত্নসহকারে প্রতিপালন করেছিলেন।

শৈশবকালেই তিনি মক্কা চলে যান, এবং সেখানে আল-কুরআন হেফজ করেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি ইমাম মালেক রহ.-এর ‘মুওয়াত্তা’ হাদীসের গ্রন্থটি পুরোপুরি মুখস্থ করেন। তাঁর গভীর জ্ঞান ও মেধা দ্রুতই প্রকাশ পায়। ১৫ বছর বয়সে তিনি ফতোয়া দিতে শুরু করেন, যা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

ইমাম শাফেয়ী রহ. তাঁর জীবনে অনেক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, এবং তিনি ইসলামী আইন শাস্ত্রে শাফেয়ী মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি মুসলিম সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছে, যা আজও আমাদের শিক্ষার অংশ হিসেবে বিদ্যমান।

ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর শিক্ষা, তাঁর ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং আল্লাহ তায়ালার প্রতি তাঁর অটল ভরসা আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে, যাতে আমরা সঠিকভাবে ইসলামী আইন, শিষ্টাচার এবং দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে পৌঁছানোর সঠিক পথ অনুসরণ করতে পারি।

ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর জীবন ও শিক্ষার এই নৈতিক দিকগুলো আজকের মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত শবে বরাতের মতো মহিমান্বিত রাতগুলোতে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে