ঢাকা, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে কি শর্ত দিল ভারত

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২৩ ১১:২৬:২৩
হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে কি শর্ত দিল ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দিল্লির লদি স্টেটের একটি অভিজাত বাংলোর সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর প্রহরা। বাংলোর ভিতরে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তারপর থেকে সময় যেন থমকে গেছে, আর ঢাকায় ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যা স্বস্তি দিচ্ছে না। কূটনৈতিক মহল এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট কক্ষে আলো জ্বলছে। টেবিলের ওপর খোলা পড়ে রয়েছে একটি কূটনৈতিক নোট, যেখানে বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে। কিন্তু অনেক সময় পার হয়ে গেলেও দিল্লি থেকে কোনো উত্তর আসেনি।

ডিপ্লোমেটের একটি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছে, এবং এর সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও বিচারিক কার্যক্রমের দলিলও সংযুক্ত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মো. রফিকুল আলম জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ভারতকে অনুসন্ধানী দল পাঠানোর মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি সহজ করা হবে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ২০১৬ সালে সংশোধিত হয়। এই চুক্তির আওতায়, দুই দেশ অপরাধীদের ফেরত পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তবে শেখ হাসিনার মতো উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে এটি জটিল হতে পারে।

আইন বিশেষজ্ঞ ড. সঙ্গীতা ঠাকুর বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে পর্যালোচনা করবে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলি ভারতের আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় কিনা। এটিকে দ্বৈত অপরাধ নীতি বলা হয়। এছাড়া, রাজনৈতিক, সামরিক বা ধর্মীয় কারণে কাউকে ফেরত পাঠানো যাবে কিনা, সেটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আরও গভীরভাবে বিবেচনা করা হবে। প্রাথমিক পর্যালোচনার পর, বিষয়টি ভারতের বিশেষ প্রত্যর্পণ আদালতে যাবে। ড. ঠাকুর মনে করেন, যদি আদালত মনে করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তাহলে প্রত্যর্পণ আটকে যেতে পারে। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে এবং তারা দাবি করতে পারে যে, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানো হলে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হিংসা হতে পারে।

শেখ হাসিনার সামনে বিকল্প পথও রয়েছে। তিনি ভারতের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে পারেন, যদি তিনি দাবি করেন যে, বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে অনিয়মিত বিচার হতে পারে। এর মাধ্যমে, ভারতে দীর্ঘমেয়াদী আশ্রয়ের সুযোগ তৈরি হতে পারে।

দ্য ডিপ্লোমেটের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দিল্লির জন্য এটি এক কূটনৈতিক দোটানার বিষয়। যদি ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠায়, তবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে, তবে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। অন্যদিকে, যদি ভারত তাকে আশ্রয় দেয়, তবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হতে পারে, যা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

দিল্লির বাংলোর একটি ছোট্ট কক্ষে বসে আছেন শেখ হাসিনা। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে খবরের কাগজ এবং টেলিভিশনের পর্দায় স্ক্রল হয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর শিরোনাম। কিন্তু তার চোখে কোনো টেনশন নেই, মুখে এক অদ্ভুত নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি। তিনি জানেন, মোদি তাকে আশ্রয় দেবেই, কারণ ভারত কখনোই চায় না বাংলাদেশ স্থিতিশীল থাকুক। শেখ হাসিনাও জানেন, তিনি এখানেই থাকবেন, এখান থেকেই তিনি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন, শেষ নিঃশ্বাস অবধি।

এটি শুধু একটি কূটনৈতিক পরিস্থিতি নয়, বরং এটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য এক গভীর সংকট। দিল্লি যদি হাসিনাকে ফেরত পাঠায়, তাহলে আন্তর্জাতিক মহলে তার বিরুদ্ধে গুরুতর সমালোচনা হতে পারে। আবার, যদি ভারত তাকে আশ্রয় দেয়, তবে তা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে