ঢাকা, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বরে গণহত্যা: হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মার্চ ১২ ১৬:০৮:৫৯
২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বরে গণহত্যা: হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৩ সালে শাপলা চত্তরে যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড এবং নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়েছিল, সে বিষয়ে নানা অভিযোগ জমা পড়েছিল। আজ আমরা এই ঘটনার তদন্তের ভিত্তিতে নয়জনের বিরুদ্ধে একটি অনারেবল ট্রাইবুনালে আবেদন করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছি।

এই নয়জনের মধ্যে চারজন বিভিন্ন মামলায় জেল হাজতে আছেন, সেজন্য তাদেরকে এই মামলায় সোনারেস্টের আবেদন করা হয়েছে। অনারেবল ট্রাইবুনাল উভয় আবেদন মঞ্জুর করেছে। যাদের মধ্যে যারা গ্রেফতার হননি, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং যারা গ্রেফতার আছেন, তাদের সোনারেস্টের আবেদন মঞ্জুর করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যাদের বিরুদ্ধে আমরা আবেদন করেছি, তারা হলেন: - শেখ হাসিনা (পলাতক), - ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, - ড. ইমরান এইচ সরকার, - হাসান মাহমুদ, - খন্দকার, সাবেক আইজিপি, - বেনজির আহমেদ, সাবেক আইজিপি, - এডভোকেট শামসুল হক টুকু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, - একেএম শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি, - সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল হাসান, - মোল্লানা নজরুল ইসলাম, সাবেক ডিআইজি।

তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের স্বার্থে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে, যেগুলি আমরা এখন প্রকাশ করছি না। তবে আমরা ইতোমধ্যে প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রাইম অফিসিভ কেস পাওয়ার পর ট্রাইবুনাল থেকে সোনারেস্টের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। আগামী ১২ মার্চ ২০২৫ তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আমরা আদালতে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি এবং ইমরান সরকারের যোগসাজশের বিষয়ে বলেছি যে, শাপলা চত্তরের গণহত্যার পটভূমি তৈরি করেছিল গণজাগরণ মঞ্চ। এছাড়া, এই গণজাগরণ মঞ্চ বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচার ও ধর্মীয় অধিকারগুলির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিল এবং হেফাজতের কর্মীদের হত্যার সময় তাদের নেতাকর্মীরা সশরীরে অংশগ্রহণ করেছিল, যা আমাদের তদন্ত সংস্থা প্রমাণ পেয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে ইমরান এইচ সরকার সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে শাপলা চত্তরে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই কারণে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে এবং আমরা বিষয়টি আদালতের কাছে স্পষ্ট করেছি।

শাপলা চত্তরের গণহত্যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম একটি বড় ঘটনা। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার ও প্রতিবাদ স্তব্ধ করা হয়। নিহতদের অধিকাংশই ছিল মাদ্রাসার ছাত্র, এতিম শিশু, কিশোর, হাফেজ। তাদেরকে অজ্ঞাতনামা কবরে সমাধি দেওয়া হয় এবং তাদের পরিবারকে চাপ দেওয়া হয়েছিল যেন তারা তাদের সন্তানদের মৃত্যু নিয়ে কিছু প্রকাশ না করে।

এই সময় মানবাধিকার সংগঠন "অধিকার" নিহতদের সংখ্যা প্রকাশ করেছিল, এবং তাদের প্রধান নির্বাহী আদিলুর রহমান খানকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল, যা ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘন।

এই গণহত্যার বিচার মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ট্রাইবুনাল তদন্ত করছে। এখনও নিহতদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা হয়নি, তবে তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

ক্রাইমস এগেন্স্ট হিউম্যানিটিতে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, সেই সময়ের কমান্ড স্ট্রাকচারকে বিচার করা। প্রাইম মিনিস্টার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, র‍্যাব প্রধান, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল।

এখন, প্রথমে আমরা টপ কমান্ডারদের বিচার করতে চাই, সেজন্যই আজকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ করা যায়। যদিও কিছু কিছু বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি যাতে এই ধরনের ঘটনা আবার না ঘটে।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ