ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন হত্যায় ভারতের হাত ছিল

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মার্চ ২৬ ১১:৩০:৪৩
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন হত্যায় ভারতের হাত ছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে, পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের নাম প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতের সহযোগিতা মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু ইতিহাসের এক অজানা সত্য সামনে এসেছে, যা চাঞ্চল্যকর এবং শোচনীয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে, যেখানে ভারত বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে উপস্থাপন করেছিল, সেখানে কিছু কার্যকলাপ সন্দেহজনক ছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ভারতের কিছু অতি সূক্ষ্ম রাজনৈতিক চক্রান্ত বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল, এমনকি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের শহীদ হওয়া এবং বাংলাদেশের নৌবাহিনীর জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়ার ঘটনাও তেমন একটি উদাহরণ।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন মুক্তিযুদ্ধে মেজর শফিউল্লাহর নেতৃত্বে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের আগরতলায় ১০ নম্বর নৌ সেক্টর গঠন করা হয়, যেখানে রুহুল আমিন যোগ দেন এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন মনীন্দ্রনাথ সামন্তের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দুটি গানবোর্ড উপহার পায়। এগুলোর নাম দেওয়া হয় পদ্মা এবং পলাশ, এবং রুহুল আমিন পলাশের প্রধান ইঞ্জিন রুমের দায়িত্বে ছিলেন।

৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে যশোর সেনানিবাস পতন হয়। পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে থাকে এবং মুক্তিযোদ্ধারা মংলা বন্দরের দিকে এগিয়ে যায়। ১০ ডিসেম্বর, খুলনার নৌঘাট দখলের উদ্দেশ্যে পদ্মা ও পলাশ গানবোর্ড মংলা বন্দরের দিকে রওনা দেয়।

তবে এই যাত্রায় ঘটে এক ভয়াবহ ভুল। ভারতীয় বিমান বাহিনীর তিনটি জঙ্গি বিমান মুক্তিযুদ্ধের জাহাজগুলোর দিকে চলে আসে, এবং মুক্তিযোদ্ধারা এগুলোকে পাকিস্তানি বিমান মনে করে গুলি চালানোর অনুমতি চায়। কিন্তু ক্যাপ্টেন মনীন্দ্রনাথ সামন্ত ভারতীয় বিমান জানিয়ে গুলিবর্ষণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কয়েক মিনিট পর, ওই বিমানগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে নীচে নেমে এসে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এর ফলে পদ্মা ও পলাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গোলার আঘাতে পলাশের ইঞ্জিন রুম বিধ্বস্ত হয়ে যায়, এবং বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ডান হাত পুরোপুরি উড়ে যায়। তবুও তিনি চেষ্টা চালিয়ে যান, কিন্তু ইঞ্জিন বিকল হয়ে আগুন ধরে যায় এবং অবশেষে পলাশ ধ্বংস হয়ে যায়। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন এক হাত হারিয়ে রূপসা নদীতে ঝাঁপ দেন, কিন্তু রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন। রাজাকাররা তাকে হত্যা করে এবং তার মরদেহ অযত্নে পড়ে থাকে। পরবর্তীতে স্বাধীনতার পর, বাগমারা গ্রামের স্থানীয় জনগণ রুহুল আমিনের মরদেহ দাফন করেন রূপসা নদীর পাড়ে এবং সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৩ তারিখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাতজন বীর সন্তানকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেওয়া হয়, যার মধ্যে রুহুল আমিনও ছিলেন।

এই ঘটনা ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর অধ্যায়, যা ভারতের চক্রান্ত ও বাংলাদেশের প্রতি তার দ্বিচারিতার অশুভ চিত্র তুলে ধরে।

সাকিব/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ