নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমারে recent শক্তিশালী ভূমিকম্প আবারও প্রমাণ করেছে যে, ভূমিকম্পের ফলে কী ধরনের বিপর্যয় হতে পারে। বাংলাদেশও এ ধরনের বিপদ থেকে মুক্ত নয়, বিশেষত ঢাকার অপরিকল্পিত নির্মাণের কারণে। সাত মাত্রার বা তার বেশি ভূমিকম্পে ঢাকার বেশ কিছু পাড়াঘর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ঢাকার মাটির নিচে এক ভয়ঙ্কর বিপদের অস্তিত্ব রয়েছে, এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

শুক্রবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ভূমিকম্পটি থাইল্যান্ডে অনুভূত হয়েছে, এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, এমনকি বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। মিয়ানমারে এখনও পর্যন্ত ১৪৪ জন নিহত এবং ৭০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডে মারা গেছেন অন্তত ৯ জন, এবং দুই দেশে বহু মানুষ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১২:৫০ মিনিটে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরও তীব্র করে তুলেছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হয়নি, যা এই অঞ্চলের জন্য বড় বিপদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ভারত, মিয়ানমার (বার্মা) এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ফলে এখানে যে কোনো সময় বড় ভূমিকম্প হতে পারে। ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে বিধ্বংসী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্যাংককের ৩০ তলা ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে এবং সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এমন একটি ভূমিকম্প বাংলাদেশে ঘটে, তবে পরিস্থিতি হবে অতি ভয়াবহ।

ভূতত্ত্ববিদরা বলেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অঞ্চলে আট মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তি জমা হয়ে আছে। যে কোনো সময় এই শক্তি মুক্তি পেতে পারে, এবং এতে সিলেট ও চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, এরপর মাঝারি ঝুঁকিতে আছে রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগ, এবং কম ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনা ও বরিশাল বিভাগ।

গত কয়েক শতাব্দীতে এই অঞ্চলে কিছু ভূমিকম্প ঘটেছে, তবে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট পর্যন্ত গত ৪০০ থেকে ১,০০০ বছরে বড় ভূমিকম্প হয়নি। তবে এখানে ভূতাত্ত্বিক শক্তি বিপুল পরিমাণে জমা হয়ে আছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক ভূমিকম্প ঘটেছে, যার মধ্যে মাঝারি থেকে বড় ভূমিকম্পও ছিল। যদিও এখনও পর্যন্ত এসব ভূমিকম্পে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবে দেশের চারপাশে একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প বলয় তৈরি হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে, যা ভূমিকম্পের সময় ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এসব ভবনের নিচে চাপা পড়ে প্রাণহানির সংখ্যা লাখ লাখ হতে পারে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের সক্রিয় এলাকায় অবস্থিত এবং দুর্যোগ সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম।

— সিদ্দিকা/