সদ্য সংবাদ
হাসিনার রাজনীতি শেষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংককের আকাশে সূর্য যখন গোধুলির ছায়া ফেলছিল, তখন এক গোপন কক্ষে রাজনীতির এক নতুন অধ্যায় লেখা হচ্ছিল। বিমস্টেক সম্মেলনের ব্যস্ততায় যখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছিল, তখন একটি বৈঠক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এটি ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের মুখোমুখি সাক্ষাৎ।
এটি কোনো প্রেস কনফারেন্স ছিল না, ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে ছবি তোলা হয়নি, কিন্তু বন্ধ দরজার আড়ালে যা হয়েছিল, তা দুই দেশের ইতিহাসে নতুন মোড় দিয়েছিল, কিছু সম্পর্ককে বিসর্জনও দিয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন আশ্বাসও তৈরি করেছে।
দুই নেতা করমর্দন করলেন, সেই মুহূর্তের ছবি হয়তো সাধারণ চোখে সৌজন্য বিনিময় মনে হতে পারে, কিন্তু যারা কূটনীতির ভাষা বোঝেন, তাদের কাছে এটি ছিল এক নীরব ঘোষণা। একসময় শেখ হাসিনা ছিলেন ভারত নির্ভর বাংলাদেশ, কিন্তু আজ ভারত তার হাত বাড়াচ্ছে এমন একজন নেতার দিকে, যিনি কোনো দল করেন না, তবে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং নৈতিকতায় প্রশ্নাতীত।
মোদি ধীরে স্বর নামিয়ে বললেন, "হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ, কিন্তু আপনার প্রতি তার আচরণ আমাদের পছন্দ হয়নি। ভারত সবসময় আপনাকে সম্মান করেছে।" এই একটি বাক্যই অনেক কিছু বলে দেয়।
ভারতের প্রতি হাসিনার ছিল চরম আনুগত্য—প্রতিটি বিতর্কে চুপ থাকা, সীমান্ত হত্যা, তিস্তা পানি নিয়ে কিছু না বলা—এসবের মধ্যেই তার পররাষ্ট্রনীতি দাঁড়িয়ে ছিল। আওয়ামী লীগের ভরসা ছিল ভারত, সবসময় পাশে থাকবে। কিন্তু রাজনীতি কখনো আবেগের উপর চলে না, এটি চলে প্রয়োজন, স্বার্থ এবং সময়মত অবস্থান বদলের পেশাদারিত্বের মাধ্যমে।
আজ ভারত বলছে, "আমরা ডক্টর ইউনুসের পাশে আছি," এবং এটি শুধু ডক্টর ইউনুসের প্রতি সম্মান জানানো নয়, বরং হাসিনার জন্য এক অরাজনৈতিক অবসরের নির্দেশনা। আজ শেখ হাসিনা, যিনি চারপাশে মানুষের মাঝে থেকেও, বাস্তবতায় নিঃসঙ্গ হয়ে যাচ্ছেন, তার মুখে এক নিরাবেগ স্তব্ধতা ছিল। একসময় যে দেশ তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল, আজ সেই দেশই তাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। তার হাতে হয়তো একটি রিমোট, টিভির পর্দায় বৈঠকের ক্লিপ চলছে, আর চোখে মুখে জমে থাকা ইতিহাসের বোঝা।
একসময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলতেন, "ভারতের ছায়া ছাড়া কেউ বাংলাদেশ শাসন করতে পারবে না," কিন্তু আজ সেই নেতারা নিশ্চুপ। কারণ ছায়া বদলে গেছে, এখন দিল্লির ভাষা বদলে গেছে, সম্পর্কের সংজ্ঞা বদলে গেছে। আজ ভারত বলছে, "আমরা দলভিত্তিক নয়, জনগণভিত্তিক সম্পর্ক চাই।" এটি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মেরুদণ্ডে যেন আঘাত এনেছে, কারণ তাদের মূল ভিত্তি ছিল ভারতীয় সমর্থন—যেটি এখন নিষ্ক্রিয়।
ডক্টর ইউনুস কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান নন, তার পেছনে নেই কোনো কর্পোরেট ফান্ড বা রাজনৈতিক ফ্যাসাদ। তবুও তিনি আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য এবং সবচেয়ে সম্মানিত নাম। তিনি একটি নৈতিক কূটনৈতিক পথ দেখাচ্ছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান, কিন্তু তার সমতা, ন্যায় এবং পরস্পরের স্বার্থে। আর মোদির কাছ থেকে তিনি সেই সম্মান পেয়েছেন, যেখানে শেখ হাসিনা তার শাসনকালজুড়ে আপোষ করেছেন।
বাংলাদেশের জনগণ দেখেছে কীভাবে ভোটবিহীন শাসন চলে, কীভাবে দুর্নীতি, হামলা, ভয় দেখিয়ে পুরো রাষ্ট্র এক ব্যক্তির শাসনে বন্দি রাখা হয়। আজ সেই জনতাই বলছে, "আমরা অপেক্ষা করছি শতাব্দীর সেরা বিচার দেখার জন্য।" শেখ হাসিনা এখন শুধু এক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি এক প্রতীকে রূপ নিয়েছেন—এক শাসকের, এক নীরব নিঃশংসতার এবং এক নিঃশব্দ জুলুমের। আর তার বিপরীতে, ইউনুস হচ্ছেন একজন প্রতিশ্রুতির নাম, যিনি বলছেন, "বিচার আসবেই, ইতিহাসকে থামানো যাবে না।"
বিশ্বরাজনীতি যখন এশিয়ার দিকে নজর দিচ্ছে, তখন ভারত নিজের আঞ্চলিক অবস্থান নতুন করে সাজাচ্ছে। তারা এখন আর একদলীয় কর্তৃত্বশীল সরকারকে সমর্থন করে না, তারা চায় স্থিতিশীল, গ্রহণযোগ্য বৈশ্বিক মানসম্পন্ন নেতৃত্ব। এই কাঠামোতে হাসিনার জন্য আর স্থান নেই। আর এই কারণেই মোদিই ইউনুসের পাশে দাঁড়িয়ে দিলেন এক ঐতিহাসিক বার্তা—"বাংলাদেশ এখন নতুন নেতৃত্বের দিকে হাঁটছে, এবং আমরা সঙ্গে আছি।"
ব্যাংককের সেই কক্ষে আলো নিভে গেছে, কিন্তু সেই আলো নিভে যাওয়ার মানে অন্ধকার নয়। বরং, এটি একটি নতুন ভোরের প্রস্তুতি। ইউনুস যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, এটি শুধু রাজনৈতিক মঞ্চ নয়, এটি নৈতিক নেতৃত্বের প্রতীক। মোদি যখন বলছেন, "আপনার প্রতি অসম্মান আমরা মেনে নেইনি," তখন বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই। হাসিনার জন্য এটি শুধু নির্বাসনের নয়, এটি তার রাজনৈতিক মৃত্যুদণ্ডের নিঃশব্দ ঘোষণা। আর ইউনুস এখন শুধু একজন উপদেষ্টা নন, তিনি সময়ের প্রতিশ্রুতি।
দরজার ওপারে অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে, বাইরে একটি ছায়া নড়েছে। শেখ হাসিনা ভারতের কোনো অন্ধকার প্রকোষ্ঠে হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন। তার প্রধানমন্ত্রীত্বের শেষ অধ্যায় কি এখানেই শেষ? নাকি বাংলাদেশের মাটিতে তার জন্য অপেক্ষা করছে একটি ফাঁসির দড়ি? সময়ের গর্ভে লুকিয়ে রয়েছে উত্তর।
—সাকিব/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সৌদি আরব ছাড়ার কঠোর নির্দেশনা
- হামজার কারণে সিঙ্গাপুর হারল
- সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বড় সুখবর!
- বাটা কোন দেশের কোম্পানি; যা জানা গেল
- ইমাম মাহদীর আগমনের পূর্বে তিন মহাপুরুষের আগমন
- ভাতিজি যখন বউ থেকে পরিণত হয়েছেন দানবে
- হাদিসে বর্ণিত সেই দলটি, যারা ফিলিস্তিন জয় করবে
- ইসরাইলের পতন নিয়ে কোরআনে যে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে
- মাত্র তিন মিনিটে দুই দফা ভূমিকম্প
- বাংলাদেশে শুল্ক কমানো নিয়ে ট্রাম্পের বিশেষ বার্তা
- ঈদুল আযহার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ হল
- বাংলাদেশি মুসলমানদের জন্য সৌদি ভিসা নিষেধাজ্ঞার পেছনে মূল কারণ
- ভারতীয় ভিসা নিয়ে বড় সুখবর
- জামিন না পেয়ে আদালতে যা করলেন ব্যারিস্টার সুমন
- ৪ মাফিয়া ছাড়া হাসিনার কাছে পাত্তা পেতেন না কেউ