ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

নরেন্দ্র মোদির চেয়ে কেন প্রফেসর ইউনূস বড় খেলোয়াড়

২০২৫ এপ্রিল ০৯ ২০:০০:০৬
নরেন্দ্র মোদির চেয়ে কেন প্রফেসর ইউনূস বড় খেলোয়াড়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার রাত, একদম নিস্তব্ধ। দূরে বুড়িগঙ্গার জলে চাঁদের আলো ঝিকমিক করছে, অথচ এক গোপন কক্ষে উত্তেজনা থেমে নেই। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস টেবিলের পাশে বসে আছেন, হাতে একটি পুরনো কাগজ, চোখে এক জাতির গভীর আকাঙ্ক্ষা। এই মানুষটি, যিনি একদিন নোবেল পুরস্কার জিতে বিশ্বকে দারিদ্র্য দূর করার পথ দেখিয়েছিলেন, আজ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে একটি নতুন কূটনৈতিক চাল দিয়েছেন।

দিল্লির প্রাসাদে নরেন্দ্র মোদির মুখে চিন্তার ছাপ। তার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া একসময় ইউনূসকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছিল, কিন্তু আজ মোদিকেই তার দরজায় আসতে হয়েছে। নোবেলজয়ী এই প্রফেসরের কূটনীতির সামনে মোদি যেন অসহায়। যেই বাংলাদেশকে একদিন অবহেলা করা হয়েছিল, সেই বাংলাদেশ এখন মোদিকে পা রাখতে বাধ্য করছে এবং ইউনূসের সামনে বসে তার কথা শুনতে হচ্ছে। কারণ, বিমস্টেকের নতুন চেয়ারম্যান এখন ইউনূস।

এটি কি কেবল একটি কূটনৈতিক নাটক, নাকি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন কোনো খেলোয়াড়ের আবির্ভাব? সময় যত এগোচ্ছে, ডক্টর ইউনূসের প্রভাব বিশ্বব্যাপী আরও বিস্তার পাচ্ছে। সম্প্রতি মোদির সঙ্গে তার বৈঠক তারই প্রমাণ। প্রথমে মোদির ঘনিষ্ঠ মিডিয়া দ্বিধাগ্রস্ত ছিল এবং ইউনূসকে নিয়ে বিরোধিতা করেছিল। তারা বলেছিল, একজন অর্থনীতিবিদ দেশ চালাতে পারেন না, হাসিনার পর বাংলাদেশ ভেঙে পড়বে। কিন্তু শেষমেশ সেই মোদিকেই ইউনূসের পাশে বসতে হলো।

এই বৈঠক বাংলাদেশের নতুন শক্তির স্পষ্ট ইঙ্গিত। এখন বড় খবর হলো, মোদিকে বাংলাদেশে আসতে হবে। বিমস্টেকের চেয়ারম্যানশিপ বাংলাদেশে এসেছে, এবং আগামী এপ্রিলে ঢাকায় পরবর্তী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইউনূস তখন দায়িত্বে থাকুক বা নতুন সরকার আসুক, মোদির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। তাকে ইউনূসের সঙ্গে মুখোমুখি বসে তার পরিকল্পনা শুনতে হবে, কারণ এই আঞ্চলিক জোটের নেতা এখন ইউনূস।

ইউনূসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নতুন কিছু নয়। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি দারিদ্র্য নির্মূলের প্রতীক হয়ে ওঠেন। তবে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি শুধু একজন অর্থনীতিবিদই নন, বরং একজন দক্ষ কূটনীতিকও। আট বছর ধরে সমাধানহীন রোহিঙ্গা সংকটকে তিনি মাত্র আট মাসে একটি সমাধানের দিকে নিয়ে গেছেন। চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বিমস্টেকের নেতৃত্ব গ্রহণ করে, তিনি বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

এখন দুই বছর ধরে বিমস্টেকের দায়িত্ব বাংলাদেশে, এবং সম্মেলনে বাণিজ্য, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা হচ্ছে। ইউনূসের দৃষ্টিভঙ্গি এই জোটকে নতুন গতি দিয়েছে।

মোদির ঘনিষ্ঠ মহল একসময় মনে করেছিল, হাসিনার পর বাংলাদেশ দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু ইউনূসের কূটনীতি সব হিসেব উল্টে দিয়েছে। মোদি, ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বুঝেছেন, এই বাংলাদেশ আর ভারতের ছায়ায় থাকবে না। মোদির কথায়, ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করতে চায়। এটি ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি এক স্বীকৃতি। বিমস্টেকের চেয়ারম্যানশিপ এই অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করেছে।

এপ্রিলের বিমস্টেক সম্মেলনে মোদিকে ঢাকায় আসতে হবে, এটি তার জন্য অপরিহার্য সফর। হাসিনার আমলে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন একজন প্রভাবশালী মিত্র হিসেবে, কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি স্বতন্ত্র পথ অনুসরণ করছে, এবং মোদিকে এখন তার পরিকল্পনা শুনতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউনূসের কৌশল মোদিকে চাপে ফেলেছে। বিমস্টেকের নেতৃত্ব ভারতের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করেছে। জাপান সফরের সম্ভাবনাও আলোচনায় রয়েছে, যা সফল হলে বাংলাদেশের প্রভাব আরো বাড়বে।

ইউনূসের হাতে বাংলাদেশ নতুন দিশা পেয়েছে—রোহিঙ্গা সংকটে অগ্রগতি, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য এবং বিমস্টেকের নেতৃত্ব। এসবই তার দক্ষতার প্রমাণ। তিনি শুধু একজন অর্থনীতিবিদই নন, বরং একজন দূরদর্শী নেতা, যার পরিকল্পনা বাণিজ্য, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছে।

মোদির মিডিয়া একসময় ইউনূসকে নিয়ে হাসাহাসি করেছিল, কিন্তু এখন তারা নিশ্চুপ। ইউনূসের সামনে মোদির অসহায়তা স্পষ্ট। বিমস্টেকের ভূমিকা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন শক্তির জন্ম দিয়েছে।

ঢাকার সেই গোপন কক্ষে আলো নিভে গেছে, কিন্তু ইউনূসের চোখে জ্বলছে একটি স্বপ্ন—একটি শক্তিশালী, স্বনির্ভর বাংলাদেশ। তার পেছনে জনগণের সমর্থন, তার হাতে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা। মোদি যখন ঢাকার মাটিতে পা রাখবেন, তিনি দেখবেন, এই বাংলাদেশ আর আগের মতো নেই। একদিন যাকে তুচ্ছ মনে করা হয়েছিল, সেই ইউনূসের সামনে আজ মোদি অসহায়।

ইতিহাসের পাতায় কি লেখা হবে তা সময় বলে দেবে, কিন্তু একথা স্পষ্ট—নোবেলজয়ী ইউনূসের কূটনীতির সামনে মোদির চিৎকার করা, এখন নিঃশব্দে হারিয়ে গেছে।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

হামজার কারণে সিঙ্গাপুর হারল

হামজার কারণে সিঙ্গাপুর হারল

নিজস্ব প্রতিবেদক: এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস খুবই উচ্চ পর্যায়ে। সিঙ্গাপুরের তুলনায় সব দিক থেকেই... বিস্তারিত