ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভিনিসিয়ুসের মতো ‘ব্যালন ডি’ অর’ পুরস্কার হারানোর তালিকায় আছেন যেসব তারকা ফুটবলার

ফুটবল ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৪ অক্টোবর ২৯ ২১:২৯:১৬
ভিনিসিয়ুসের মতো ‘ব্যালন ডি’ অর’ পুরস্কার হারানোর তালিকায় আছেন যেসব তারকা ফুটবলার

ব্যালন ডি'অর পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক এবং "অন্যায়ভাবে" পুরস্কার হারানোর ঘটনা ফুটবল বিশ্বে বারবার আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিনিসিয়ুসের মতো ‘ব্যালন ডি’ অর’ পুরস্কার হারানোর তালিকায় আছেন যেসব তারকা ফুটবলার, তাদের ইতিহাস বিবেচনা করলে অবাক হবেন। সেই কপাল পোড়ার তালিকায় আছেন ওয়েসলি স্নাইডার, গ্যারি লিনেকার, জাভি, ইনিয়েস্তা, রবার্তো বার্জিও, পাওলো মালদিনি। পুরস্কারটি দেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে, যা ভক্ত এবং বিশেষজ্ঞদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করেছে। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সাম্প্রতিক ঘটনা ছাড়াও ফুটবল ইতিহাসে আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ রয়েছে যেখানে সম্ভাব্য বিজয়ী হয়েও খেলোয়াড়েরা পুরস্কার হাতছাড়া করেন।

আর্লিং ব্রুট হালান্ড - ২০২৩ ২০২৩ সালে ম্যানসিটির হয়ে অসাধারণ ফর্মে ছিলেন আর্লিং হলান্ড। কিন্তু লিওনেল মেসির কাছে তাকে পরাজয় বরণ করতে হয়। এর ঠিক আগের মৌসুমে ট্রেবল জিতেছেন। মৌসুম জুড়ে গোল করেছেন ৫২টি। জিতেছেন উয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাবটাও। যে কারণে হালান্ডকে খুব একটা পিছিয়ে রাখা যায়নি শুরু থেকেই।

কিন্তু ব্যালন ডি অর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২২ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই সময়কেই ২০২৩ সালের পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ছিলেন অনেকেই। আচমকা নিয়মের বদল মানতে পারেননি অনেকেই।

এ সময়ে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি পিএসজির হয়ে ফ্রেঞ্চ লিগ জিতেছেন মেসি। এমনকি নতুন ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়েও দারুণ শুরু করেছিলেন। ব্যালন ডি অরও ওঠে মেসিরই হাতে। তা নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছিল সেবারে।

রবার্ট লেভানডফস্কি - ২০২০ এবং ২০২১ তারপর আরও একবার নয় পর পর দুবার ব্যালন ডি অর পুরস্কার হাত করেন লেভানডফস্কি। ফুটবলের ইতিহাসে মাত্র ২য় দল হিসেবে দুইবারের ট্রেবল এবং হেক্সা পূরণ করেছিল বায়ার্ন মিউনিখ। সাল ২০২০। যখন পুরো বিশ্ব আক্রান্ত কোভিডে, তখনই ফাঁকা গ্যালারির সামনে বায়ার্ন দেখিয়েছিল তাদের এমন দাপট। কিন্তু, সেবারে কোভিডের ইস্যু তুলে ব্যালন ডি অর প্রদান বন্ধ রাখে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন। কিন্তু সেবারে বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি এতই দুর্দান্ত ছিলেন, অন্য কারো কথা ভাবাই ছিল অন্যায়।

২০২১ সালে এসেও সেই ক্ষুরধার ফর্ম ধরে রেখেছিলেন লেভা। ব্যালন ডি অর তার পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। অনুষ্ঠানের রাতে বায়ার্ন মিউনিখের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজেই বলা হয়, ‘রবার্ট লেভানডফস্কি নিজের প্রথম ব্যালন ডি’ অর নিতে যাচ্ছেন।’

কিন্তু এবারেও বাদ সাধে মেসির বিশাল ভোটব্যাংক। নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা পেয়েছিলেন লিওনেল মেসি। কোপা আমেরিকার সেরা খেলোয়াড়। বার্সেলোনার হয়ে ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় সাফল্য টেনে নিয়েছিল সাংবাদিকদের ভোট। একেবারে কাছ থেকে ব্যালন মিস করেন লেভানডফস্কি।

ফ্রাঙ্ক রিবেরি - ২০১৩ ২০১৩ সালে ভালো খেলেও ব্যক্তিগত পুরস্কারটি পাওয়া হয়নি রিবেরির। বলা হয় ‘ব্যালন ডি অর ডাকাতি’ ২০১৩ সালে উড়ন্ত ছন্দে থাকা বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ৭-০ গোলে মাটিতে নামিয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখ। ইয়ুপ হেইঙ্কেসের অধীনে সেই বায়ার্ন জয় করেছিল সম্ভাব্য সব শিরোপাই।

প্রায় সবাই নিশ্চিত ছিলেন রিবেরির ব্যালন ডি’ অর জয় নিয়ে। পুরো মৌসুমে যার ছিল ৩৪ গোল-অ্যাসিস্ট। কিন্তু সবাইকে বিষ্মিত করে শেষ পর্যন্ত ব্যালন ডি অর জেতেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সেবারের ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে আজও ক্ষিপ্ত রিবেরি। গতকাল ভিনিসিয়াস ব্যালন ডি অর না জেতার পর ইন্সটাগ্রাম স্টোরিতে হাসির ইমোজি দিয়ে পুরাতন ক্ষোভটাই নতুন করে প্রকাশ করেছেন রিবেরি।

থিয়েরি অঁরি - ২০০৩ এবং ২০০৪ থিয়েরি অঁরি ছিলেন অসাধারণ একজন ফুটবলার। ২০ গোল এবং ২০ অ্যাসিস্ট ছিল তার। তার আশেপাশে কেউ ছিল না। অন্য মৌসুমে আর্সেনালের হয়ে অপরাজেয় লিগ মৌসুম। আর্সেনালের থিয়েরি অঁরি ব্যালন ডি অর জিতবেন এমনটা ধরেই নিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু অদ্ভুতভাবে দুই বারেই হেরে বসেন তিনি। প্রথমবার তাকে পরাস্ত হতে হয় পাভেল নেদভেদের কাছে। জুভেন্টাসে সেই বছর এই চেক মিডফিল্ডার করেছিলেন ১৭ গোল। সঙ্গে ছিল ১৪ অ্যাসিস্ট।

পরের বছর ৩৯ গোল করেও অবিশ্বাস্যভাবে অঁরি ব্যালন ডি অর মিস করেন আন্দ্রেই শেভচেঙ্কোর কাছে। এসি মিলানে খেলা ইউক্রেনের এই ফরোয়ার্ড সেই বছরে জিতেছিলেন ইতালিয়ান লিগের শিরোপা। ২০০৪ সালে অঁরি অবশ্য সেরা তিনেই জায়গা পাননি। পোর্তোর হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা ডেকো ছিলেন দ্বিতীয়। আর বার্সেলোনার হয়ে দারুণ মৌসুম পার করে রোনালদিনহো ছিলেন তৃতীয়।

ওয়েসলি স্নাইডার - ২০১০প্রথমে প্রতারণার শিকার হোন ওয়েসলি স্নাইডার। ২০১০ সালে তিনি পারফর্মের উচ্চ শিখরে ছিলেন। ইন্টার মিলানের হয়ে তিনি ত্রিমুকুট (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সিরি আ, কোপা ইতালিয়া) জেতেন, সঙ্গে নেদারল্যান্ডসকে বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলতে বড় ভূমিকা রাখেন। তবে তার এই অবিশ্বাস্য মৌসুমের পরেও ব্যালন ডি'অর পান বার্সেলোনার লিওনেল মেসি। যখন থেকে স্নাইডারের কাছ থেকে পুরস্কারটা হাতছাড়া হয়ে গেছে তখন থেকেই বাজেভাবে আলোচনায় আসে ব্যালন ডি অর পুরস্কার।

গ্যারি লিনেকার - ১৯৮৬ ওয়েসলির আগেও আর একবার অন্যায়ভাবে ব্যালন ডি অর পুরস্কারটি গ্যারি লিনেকার এর কাছ থেকে একরকম কেড়ে নেওয়া হয়। ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের পরেও সে বছর ব্যালন ডি'অর পান সোভিয়েত গোলরক্ষক ইগর বেলানোভ, যা অনেকেই ন্যায্য মনে করেননি। ক্লাব ফুটবল বাদ দিয়েও গ্যারি নিজ দলের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক ভালো খেলে আলোচনায় ছিলেন। তবুও ব্যালন ডি'অর তার থেকে দূরে থেকে যায়।

জাভি এবং আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা - ২০০৯-২০১২এই সময়ে বার্সেলোনা দলে লিওনেল মেসির সঙ্গে জাভি ও ইনিয়েস্তা ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। স্পেনের হয়ে ইউরো এবং বিশ্বকাপ জেতা এই দুই মিডফিল্ডার অসংখ্য ট্রফি জেতার পাশাপাশি অসাধারণ খেলাও উপহার দেন। তবে তাদের এই অবদানের পরেও প্রতি বছর ব্যালন ডি'অর জিতে নেন তাদেরই সতীর্থ মেসি। বিশেষ করে ইনিয়েস্তা ২০১০ বিশ্বকাপ ফাইনালে একমাত্র গোল করেন এবং সেবার অনেকেই তাকে ব্যালন ডি'অর বিজয়ী হিসেবে প্রত্যাশা করছিলেন। তবুও এই দুই মিডফিল্ডারের কপালে ব্যালন ডি'অর জোটেনি।

রবার্তো বার্জিও - ১৯৯৪আরেক কপাল পোড়া হচ্ছেন রবার্তো বার্জিও। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত এক পারফর্ম করেন। সেমিফাইনালে অসাধারণ এক গোল করে নিজের দলকে ফাইনালে নিয়ে যান। কিন্তু ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করার কারণে আর সেই পুরস্কার জিততে পারেন নি। পরও, অনেকেই মনে করেন, ফাইনালের একটি ভুলই তার পুরো মৌসুমের অর্জনকে ম্লান করতে পারত না।

পাওলো মালদিনিউপরোক্ত ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও পাওলো মালদিনিও আছেন এই তালিকায়। সাধারণ রক্ষণাত্মক দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও মালদিনি তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একবারও ব্যালন ডি'অর জেতেননি। ইতালির জাতীয় দলের এবং এসি মিলানের হয়ে তার অসংখ্য অর্জন রয়েছে, তারপরও ব্যালন ডি'অর জেতার সৌভাগ্য তার হয়নি। এমনকি রক্ষণাত্মক খেলার কারণে এই পুরস্কারের ক্ষেত্রে অনেককেই বরাবরই অবহেলা করা হয় বলে সমালোচকরা মনে করেন।

এই ঘটনাগুলো ফুটবলের ব্যালন ডি'অর পুরস্কারের প্রভাব এবং বিতর্কিত ইতিহাসকে উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত করে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে