ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পেছনে কারা: ষড়যন্ত্রের জাল নিয়ে প্রশ্ন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৪ নভেম্বর ২৭ ২০:০১:১৩
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পেছনে কারা: ষড়যন্ত্রের জাল নিয়ে প্রশ্ন

চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ের স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার হন বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

চিন্ময়ের গ্রেফতারের পর থেকে দেশ-বিদেশে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। তার গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে সনাতনী সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ এবং সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পেছনে একটি সুসংগঠিত শক্তি কাজ করছে। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে জমি দখল, শিশু নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে থাকলেও সম্প্রতি স্বাধীনতা স্তম্ভে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিন্ময়ের কর্মকাণ্ডের পেছনে ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ও স্থানীয় রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহল সক্রিয়। এর মধ্যে ভারতের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

চিন্ময়ের গ্রেফতার নিয়ে ভারতের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী হুমকি দেন যে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অবরোধ করা হবে। এমনকি কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি। শুভেন্দুর বক্তব্যে ভারতে তীব্র সমালোচনা হলেও এটি বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর তৎপরতার স্পষ্ট প্রমাণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি, যেখানে ‘উগ্রপন্থীদের’ দ্বারা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়। চিন্ময়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এমন বিবৃতি দেয়া ভারতের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের পর থেকেই আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত বলে অভিযোগ উঠেছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইস্যুকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলার পরিকল্পনার অভিযোগও রয়েছে।

চট্টগ্রামে সহিংসতায় নিহত এপিপি সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডে প্রমাণ মিলেছে যে, চিন্ময়ের মিছিল এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার পেছনে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র কাজ করেছে। এরই অংশ হিসেবে পুলিশের হাতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ছয় নেতাও গ্রেপ্তার হন।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা হলেও এই সংগঠনের কিছু অংশ তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ইসকনকে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসকন এবং ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী মিলে এই ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইস্যু শুধু একজন ব্যক্তির অপরাধের বিচার নয়; এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পরীক্ষা। তার পেছনের শক্তিগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে দেশ আরও বড় সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে