ঢাকা, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

ক্রীড়াজীবনে সংগ্রাম: মাছ বাজারে কাজ করছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক

ক্রিকেট ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৪ ডিসেম্বর ০৩ ১৬:৪৩:৫৯
ক্রীড়াজীবনে সংগ্রাম: মাছ বাজারে কাজ করছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক

বাংলাদেশের ক্রিকেটে যখন মাশরাফী, সাকিবরা দেশ ও বিদেশের মাটিতে বড় বড় জয়ের রেকর্ড গড়ছে, তখন আরেক ক্রিকেটার, যিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, নিজের জীবিকার জন্য বরিশালের একটি মাছের আড়তে কাজ করছেন। তিনি হলেন আলম খান, যিনি একসময় বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন।

আলম খান, যার বয়স ৩১, এক সময় দলের নেতৃত্বে ছিলেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নিয়ে বাংলাদেশকে সাতটি জয়ে নেতৃত্ব দেন। তবে, তার জীবন এত সহজ ছিল না। বরিশালের পোর্ট রোডে আজও মাছের আড়তে কাজ করে, সংসার চালাতে কঠোর পরিশ্রম করছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও, কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আলম আজও ক্রিকেট খেলার স্বপ্নের পেছনে ছুটছেন।

আলমের শৈশব ছিল সংগ্রামময়। ১৯৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কোটখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র সাড়ে তিন মাস বয়সে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন এবং শরীরের নিচের অংশ শক্তি হারিয়ে বাঁকা হয়ে যায়। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে ওঠা সত্ত্বেও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে সব সময় সাহস যুগিয়েছিলেন। তবে জীবনযুদ্ধ শুরু হয় তখনই, যখন তার বাবা কম বকাঝকা করেননি। ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছিল তার, তবে পরিবারে অভাবের কারণে অনেকবার ক্রিকেট ছাড়ার শপথও নিতে হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আলমের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা অবিচল ছিল।

পিতার মৃত্যুর পর, যখন সংসার চালানোর জন্য আলমের কাঁধে দায়িত্ব আসে, তখন তার জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। পিতা ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং তাদের সংসার খরচের জন্য সব কিছু বিক্রি করতে হয়। এরপর, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও, আলম একটি মাছের আড়তে কাজ পাওয়ার পর সংসার চালাতে শুরু করেন, তবে তার প্রতিদিনের সংগ্রাম চলতে থাকে।

আলমের ক্রিকেট জীবনের শুরুটা হয়েছিল তার শৈশবে। সবার অগোচরে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন তিনি। কখনো টেনিস বল দিয়ে, কখনো ফাইভ স্টার, আবার কখনো টেপ টেনিস দিয়ে খেলা শুরু করেন। বাবার কঠোর নিষেধ সত্ত্বেও, আলমের ক্রিকেটে আগ্রহ বাড়ে। সে সময় আলমের মা তার লুকিয়ে ক্রিকেট খেলার জন্য টাকা দিতেন। এই শখের কারণে তাকে বহুবার শারীরিক শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে।

২০১৫ সালে, বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে আলম তার নিজস্ব দক্ষতা ও প্রতিভার পরিচয় দেন। সারা দেশের ১৫৬ জন ক্রিকেটারের মধ্যে তার নাম ছিল শীর্ষে। তিনি ছিলেন সেই দলটির অধিনায়ক, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। আলম তার নেতৃত্বে সাতটি ম্যাচে জয় লাভ করেন এবং জাতীয় দলের হয়ে খেলার সম্মান অর্জন করেন।

তবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল, দারিদ্র্য ও প্রতিবন্ধিতা সত্ত্বেও, ক্রিকেট খেলা কখনো ছাড়েননি। তার মতো একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটার, যে কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রামের মাধ্যমে জীবনের চড়াই-উতরাই পার করেছে, সে আমাদের জন্য একটি চিরস্থায়ী অনুপ্রেরণা। আলম খান, যার জীবন সংগ্রামের প্রতীক, আজও নিজের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করছেন এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি যেন প্রমাণ করে দেয়, কখনোই পরিস্থিতি আপনাকে থামাতে পারবে না যদি আপনি নিজে চাইলে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমিই সবার সেরা: রোনালদো

আমিই সবার সেরা: রোনালদো

বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নিজেকে সর্বকালের সেরা (GOAT) দাবি করলেও, শরীরী ভাষা বিশ্লেষক ড্যারেন স্ট্যানটনের মতে, তার... বিস্তারিত



রে